কিভাবে ব্রাজিলে রপ্তানি করবেন (২০২৬): বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ধাপে-ধাপে নির্দেশিকা

কিভাবে ব্রাজিলে রপ্তানি করবেন (২০২৬): বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ধাপে-ধাপে নির্দেশিকা

 

মো. জয়নাল আব্দীন
প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশ (T&IB)
এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর, অনলাইন ট্রেনিং একাডেমি (OTA)
সেক্রেটারি জেনারেল, ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (BBCCI)

 

বাংলাদেশের নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারগুলোর মধ্যে ব্রাজিল বর্তমানে অন্যতম দ্রুতবর্ধনশীল গন্তব্য। ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ব্রাজিলে রপ্তানি প্রায় ১৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২৬ শতাংশের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। অপরদিকে ২০২৪ সালে ব্রাজিল বাংলাদেশে প্রায় ২.৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, প্রধানত কাঁচা তুলা, চিনি ও সয়াবিন যা বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাত ও কৃষি-প্রক্রিয়াজাত শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল। এই বর্ধমান বাণিজ্য প্রবাহ স্পষ্ট করে যে দুই দেশের বাজারে প্রচুর অপ্রচলিত সুযোগ রয়ে গেছে, এবং ব্রাজিলের বাজারে সফল প্রবেশের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের অবশ্যই সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি, ডকুমেন্টেশন, ট্যারিফ কাঠামো ও লজিস্টিক ব্যবস্থা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে।

 

ব্রাজিলের আমদানি ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম জটিল ও বিস্তারিত কাঠামোর মধ্যে পড়ে। তবে এটি প্রতিবন্ধকতা নয়; বরং সঠিক মান, নিরাপত্তা, উপভোক্তা সুরক্ষা এবং রাজস্ব শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য গঠিত একটি সুসংগঠিত প্রক্রিয়া। নিম্নে ধাপে-ধাপে ব্যাখ্যাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা প্রদান করা হলো, যা ব্রাজিলে রপ্তানি করতে আগ্রহী বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য ২০২৬ সালে কার্যকর একটি ব্যবহারিক গাইড হিসেবে কাজ করবে।

 

বাজার বাণিজ্যিক পরিবেশ বোঝা

ব্রাজিল দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি এবং ২০০ মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যার একটি বিশাল ভোক্তা বাজার। অর্থনৈতিক ওঠানামার মাঝেও ব্রাজিলের আমদানি চাহিদা স্থিতিশীল থাকে; ২০২৪ সালে দেশটির আমদানি প্রায় ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা ভোক্তা পণ্য ও শিল্প-উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রেই শক্তিশালী চাহিদার পরিচায়ক। বাংলাদেশের গার্মেন্টস, হোম টেক্সটাইল, সিরামিক, চামড়াজাত পণ্য, কৃষিপণ্য, প্রসেসড ফুড এবং মেডিকেল সামগ্রী সবই ব্রাজিলের বাজারে সম্ভাবনাময় অবস্থানে রয়েছে।

 

দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে মার্কোসুর–বাংলাদেশ প্রেফারেনশিয়াল ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (PTA)-এর সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। যদি এই চুক্তি কার্যকর হয়, তাহলে শুল্ক হ্রাসের ফলে বাংলাদেশি পণ্য ব্রাজিলসহ মার্কোসুর ব্লকের অন্যান্য দেশে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। ২০২৬ সাল তাই ব্রাজিলের বাজারে ঢোকার জন্য একটি কৌশলগত সময়।

 

ধাপ ১: বাংলাদেশের রপ্তানিকারক হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণ

রপ্তানি শুরুর প্রথম ধাপ হলো কোম্পানিকে আইনগত ও প্রশাসনিকভাবে প্রস্তুত করা। বৈধ ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন, বিআইএন/ভ্যাট নিবন্ধন এবং প্রয়োজনে আরজেএসসি-তে কোম্পানি নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। এছাড়া রপ্তানি শুরুর আগে রপ্তানি নিবন্ধন সনদ (ERC) অবশ্যই সংগ্রহ করতে হবে। ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে বা রপ্তানি সংক্রান্ত লেনদেন পরিচালনা করতে ERC-কে প্রধান শর্ত হিসেবে বিবেচনা করে।

 

সেক্টরভেদে সংশ্লিষ্ট সমিতির (যেমন BGMEA, BKMEA, EPB-এর আওতাভুক্ত সমিতি বা চেম্বার) সদস্যপদ ব্যবসার পরিচিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায় এবং ব্রাজিলিয়ান বায়ারদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে সহায়তা করে।

 

উৎপাদন মান এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রাজিলিয়ান আমদানিকারকরা গ্লোবাল কমপ্লায়েন্স, মান নিয়ন্ত্রণ, টেকসই উৎপাদন এবং সামাজিক মানদণ্ড সম্পর্কে কঠোর। বাংলাদেশের অনেক শিল্পই ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মান পূরণে সক্ষম, তবে ব্রাজিলের নির্দিষ্ট নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য নিশ্চিত করাই হবে সাফল্যের প্রধান ভিত্তি।

 

ধাপ ২: পণ্য নির্বাচন এবং HS ও NCM কোড সামঞ্জস্য করা

রপ্তানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো সঠিকভাবে পণ্যের শ্রেণীকরণ। বাংলাদেশে HS কোড, আর ব্রাজিলে NCM (Mercosul Common Nomenclature) এটি এইচএস-এর বর্ধিত আট-সংখ্যার সংস্করণ। ব্রাজিলীয় কাস্টমসের সমস্ত ট্যাক্স, আমদানি শর্ত, টেকনিক্যাল রেগুলেশন ও লাইসেন্সিং এই NCM কোডের ওপর নির্ভর করে।

 

যেমন পোশাকজাত পণ্য ব্রাজিলে গড়ে প্রায় ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কে পড়ে এবং এর সাথে IPI, PIS-Import, COFINS-Import ও ICMS যুক্ত হয়ে চূড়ান্ত পণ্যমূল্য আরও বাড়িয়ে তোলে। যেহেতু ICMS অনেক রাজ্যে ১৭–১৯ শতাংশ এবং এটি অন্যান্য ট্যাক্সসহ মোট মূল্যের ওপর গণনা হয়, তাই সঠিক NCM কোড জানা ও মূল্য নির্ধারণে তা বিবেচনা করা অত্যাবশ্যক।

 

ধাপ ৩: ব্রাজিলে উপযুক্ত আমদানিকারক বা পরিবেশক নির্বাচন

ব্রাজিলের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো বিদেশি কোম্পানি সরাসরি দেশটিতে পণ্য ক্লিয়ার করতে পারে না। এজন্য একটি ব্রাজিলীয় আমদানিকারককে RADAR লাইসেন্স থাকতে হবে এবং তাকে DUIMP সিস্টেমের মাধ্যমে কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। সুতরাং বাংলাদেশি রপ্তানিকারকের প্রথম কাজ হলো আর্থিকভাবে শক্তিশালী, অভিজ্ঞ এবং নিয়মনীতি-সম্মত একটি ব্রাজিলীয় আমদানিকারক খুঁজে পাওয়া।

 

চেম্বার–ভিত্তিক যোগাযোগ, দূতাবাসের পরামর্শ, ভার্চ্যুয়াল B2B মিটিং এবং পূর্ববর্তী ক্রেতা-নেটওয়ার্ক এই ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। খাদ্যপণ্য, প্রসাধনী বা মেডিকেল ডিভাইসের মতো সেক্টরে কাজ করতে হলে আমদানিকারকের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট রেগুলেটরি দক্ষতা থাকতে হবে।

কিভাবে ব্রাজিলে রপ্তানি করবেন (২০২৬): বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ধাপে-ধাপে নির্দেশিকা

ধাপ ৪: মূল্য নির্ধারণ, পেমেন্ট টার্মস ও INCOTERMS-এ সমঝোতা

ব্যবসায়িক আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ব্রাজিলে ল্যান্ডেড কস্ট নিরূপণ করা। ব্রাজিলের বহুস্তরীয় ট্যাক্স কাঠামোর কারণে স্থানীয় আমদানিকারকের মোট খরচ পণ্যমূল্যকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই বাংলাদেশে FOB, অথবা ব্রাজিলের বন্দর ভিত্তিক CFR বা CIF শর্ত বেছে নেওয়ার আগে উভয় পক্ষেরই ব্যয়ের কাঠামো সুস্পষ্টভাবে বুঝতে হবে।

 

প্রথম লেনদেনে সাধারণত LC-কে নিরাপদ মনে করা হলেও, সম্পর্ক দৃঢ় হলে ডকুমেন্টারি কালেকশন বা ওপেন-অ্যাকাউন্ট পদ্ধতিও ব্যবহার করা যেতে পারে, বিশেষত যখন রপ্তানিকারক উপযুক্ত এক্সপোর্ট ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স ব্যবহার করেন।

 

ধাপ ৫: ব্রাজিলের রেগুলেটরি সংস্থাগুলোর অনুমোদন সম্পন্ন করা

ব্রাজিলে পণ্য প্রবেশের আগে ANVISA, MAPA বা INMETRO-এর প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

 

ঔষধ, প্রসাধনী, চিকিৎসা সরঞ্জাম, স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্ট পণ্য ও নির্দিষ্ট খাদ্যপণ্যের নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ANVISA। এই ধরনের পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমদানিকারককে আগেই ইম্পোর্ট লাইসেন্সের আবেদন করতে হয়, এবং পণ্যের লেবেল, উপাদান তালিকা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নথি পর্তুগিজ ভাষায় জমা দিতে হয়।

 

MAPA কৃষিজ ও প্রাণী-উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের দায়িত্বে থাকে। এসব পণ্যের জন্য বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত স্বাস্থ্য সনদ প্রয়োজন হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে কারখানা-স্তরের অনুমোদনও লাগে।

 

ইলেকট্রনিক্স, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, শিশুদের খেলনা বা নির্দিষ্ট শিল্পপণ্য INMETRO সার্টিফিকেশন ছাড়া ব্রাজিলে বাজারজাত করা যায় না। এসব অনুমোদন পেতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, তাই রপ্তানিকারকদের উচিত অন্তত ছয় মাস আগেই রেগুলেটরি প্রক্রিয়া শুরু করা।

 

ধাপ ৬: বাংলাদেশে রপ্তানি-সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা

রপ্তানি নথিপত্রের যথাযথ প্রস্তুতি ব্রাজিলীয় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশি রপ্তানিকারককে বাণিজ্যিক চালান (Commercial Invoice), প্যাকিং লিস্ট, সেলস কন্ট্রাক্ট বা LC-এর শর্ত পূরণ, EXP ফরম দাখিল, সার্টিফিকেট অফ অরিজিন সংগ্রহ এবং বিল অব লেডিং বা এয়ারওয়ে বিল নিশ্চিত করতে হয়।

 

কিছু ক্ষেত্রে ব্রাজিল এসব নথি দূতাবাসের মাধ্যমে আইনগত সত্যায়ন (Consular Legalization) দাবি করতে পারে। কোনো নথির বর্ণনা, পরিমাণ বা মূল্য একে অপরের সাথে অসামঞ্জস্য হলে ব্রাজিলীয় কাস্টমস শিপমেন্টকে অবিলম্বে পরীক্ষা বা অডিট চ্যানেলে পাঠাতে পারে, যা সময় ও ব্যয় উভয়ই বাড়িয়ে দেয়। তাই নথিপত্র চূড়ান্ত করার আগে বহুস্তরীয় যাচাই-প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন।

 

ধাপ ৭: পণ্য প্রেরণ ও ব্রাজিলীয় কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স সমন্বয় করা

পণ্য জাহাজীকরণের পর রপ্তানিকারকের দায়িত্ব হয় সঠিক সমন্বয় ও যোগাযোগ বজায় রাখা। চট্টগ্রাম থেকে ব্রাজিলের সান্তোস, রিও ডি জেনেইরো বা ইতাজাই বন্দরে সমুদ্রপথে পণ্য পৌঁছাতে সাধারণত ৩৫ থেকে ৪২ দিন সময় লাগে। আকাশপথে এ সময় কয়েক ঘণ্টায় নেমে আসে, তবে খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি।

 

ব্রাজিলে পৌঁছানোর পর আমদানিকারক DUIMP সিস্টেমের মাধ্যমে ইম্পোর্ট ডিক্লারেশন দাখিল করে, প্রয়োজনীয় রেগুলেটরি অনুমোদন সংযুক্ত করে এবং সংশ্লিষ্ট কর ও চার্জ পরিশোধ করে। এরপর কাস্টমস সব নথি ও ঝুঁকি-মূল্যায়ন অনুযায়ী “গ্রিন, ইয়েলো, রেড বা গ্রে” চ্যানেলের মাধ্যমে শিপমেন্ট মূল্যায়ন করে। নথির যথার্থতা এবং আগাম অনুমোদন যত নিখুঁত হবে, ক্লিয়ারেন্স তত দ্রুত হবে।

 

ধাপ ৮: বাজার সম্প্রসারণ, ব্র্যান্ডিং ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা

ব্রাজিলের বাজারে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিতে হলে স্থানীয় চাহিদা, ভাষা ও রুচির প্রতি সম্মান দেখাতে হয়। পর্তুগিজ ভাষায় প্রস্তুত ক্যাটালগ, ব্র্যান্ডিং উপাদান, বিক্রয়োত্তর সেবা ও গ্রাহক যত্ন বায়ারের আস্থা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রপ্তানি পরিমাণ বাড়তে থাকলে স্থানীয় গুদাম, স্টক-এন্ড-সেল মডেল বা এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউশন চুক্তি বিবেচনা করা যেতে পারে, যা বাজার নিয়ন্ত্রণ আরও শক্তিশালী করবে।

 

মার্কোসুর–বাংলাদেশ PTA-র অগ্রগতি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করাও অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতে শুল্ক ছাড় পাওয়া গেলে বাংলাদেশি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, জুট, সিরামিক ও ফার্মাসিউটিক্যালস আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে, এবং যারা আগে থেকেই বাজার দখলে রাখবে তারাই সর্বাধিক সুবিধা পাবে।

 

বাংলাদেশের জন্য ব্রাজিলে সম্ভাবনাময় পণ্যসমূহ

ব্রাজিলের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বৃদ্ধি এবং বহুমাত্রিক শিল্প কাঠামোর কারণে বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ বড় সুযোগ দেখতে পারে। তৈরি পোশাক এখনো বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী পণ্য, বিশেষ করে সাশ্রয়ী মূল্য, অর্গানিক কটন, স্পোর্টসওয়্যার ও প্রাইভেট-লেবেল পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। হোম টেক্সটাইল যেমন বিছানার চাদর, তোয়ালে ও পর্দা ব্রাজিলীয় খুচরা বাজারে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রাখে।

 

জুটজাত পণ্য ব্রাজিলের পরিবেশবান্ধব পণ্যের দিকে ঝুঁকে যাওয়া প্রবণতার সাথে ভালোভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সিরামিক, মেলামাইন, ব্যাগ, জুতা, লেদার সামগ্রী এবং মধ্যম-মূল্যের গৃহস্থালি পণ্য ব্রাজিলের বাড়তে থাকা ভোক্তা ব্যয়ের সাথে মানানসই। ফার্মাসিউটিক্যালস ও মেডিকেল ডিসপোজেবল পণ্যের বাজারও সম্ভাবনাময়, তবে এগুলোর জন্য ANVISA অনুমোদন অপরিহার্য।

 

বাংলাদেশে ব্রাজিলের রপ্তানি ও কাউন্টার-ট্রেডের সুযোগ

বাংলাদেশে ব্রাজিলের প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো কাঁচা চিনি, তুলা, সয়াবিন ও ভুট্টা যা দেশের টেক্সটাইল ও খাদ্যশিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এছাড়া লোহা-ইস্পাত, শিল্পযন্ত্র ও কৃষি-ইনপুটও বাংলাদেশে সরবরাহ করে। এসব প্রবাহ বোঝার মাধ্যমে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা কাউন্টার-ট্রেড, যৌথ বিনিয়োগ বা সরবরাহ শৃঙ্খলা-ভিত্তিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে পারেন।

কিভাবে ব্রাজিলে রপ্তানি করবেন (২০২৬): বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ধাপে-ধাপে নির্দেশিকা
bbcci

উপসংহার

২০২৬ সালে ব্রাজিলে রপ্তানি করা বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি বড় সুযোগ। বর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, ব্রাজিলের বিশাল ভোক্তা বাজার এবং বাংলাদেশের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত উৎপাদন সক্ষমতা এই তিনের সমন্বয় রপ্তানিকারকদের সামনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

 

তবে সাফল্য নির্ভর করবে সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতির ওপর সঠিক NCM কোড ও কর কাঠামো বোঝা, ANVISA, MAPA, INMETRO প্রবিধান মেনে চলা, নথিপত্রে নির্ভুলতা নিশ্চিত করা এবং অভিজ্ঞ ব্রাজিলীয় আমদানিকারকের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক গড়ে তোলা। এই ধারাবাহিক, ধাপে-ধাপে পরিকল্পনা অনুসরণ করলে ব্রাজিলের বাজার বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য ২০২৬ ও পরবর্তী সময়গুলোতে টেকসই এবং লাভজনক একটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্র হয়ে উঠবে।