বাংলাদেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা ও পরিপ্রেক্ষিত

বাংলাদেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা ও পরিপ্রেক্ষিত

মো: জয়নাল আব্দীন

প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ট্রেড এণ্ড ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশ (টিএন্ডআইবি)

নির্বাহী পরিচালক, অনলাইন ট্রেনিং একাডেমি (ওটিএ)

মহাসচিব, ব্রাজিল বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এণ্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিবিসিসিআই)

 

বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২.৪–২.৫ মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়[1][2]। এর বিপরীতে রপ্তানি মাত্র কয়েক হাজার টন, যা মোট উৎপাদনের খুবই সামান্য অংশ। উদাহরণস্বরূপ, ২০২২–২৩ অর্থবছরে ২৭ লাখ টন আম উৎপাদনের বিপরীতে মাত্র ৩,১০০ টন রফতানি হয়েছে, এবং ২০২৩–২৪ অর্থবছরে ২৪.৫ লাখ টন উৎপাদনের বিপরীতে রপ্তানি হয়েছে ১,৩২১ টন[3]। অর্থাৎ আম উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ সপ্তমে থাকলেও রপ্তানিতে পিছিয়ে রয়েছে[4][1]। সরকারি উদ্যোগে সাম্প্রতিক বছরে রপ্তানি প্রকল্প চালু করে লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের আম রপ্তানি প্রকল্পের পরিচালক জানান, সাম্প্রতিক মৌসুমের মধ্যে মাত্র ১৬ দিনে ২৫টি দেশে মোট ৬০০ টন আম রপ্তানি করা হয়েছে এবং আগামী তিন মাসে রপ্তানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪,০০০ মেট্রিক টন[5]

 

বাংলাদেশের আম গুণগত দিক থেকে ভালো ও সুস্বাদু বলে খ্যাত[6]। দেশে ২৩ জেলার ৭২ প্রজাতির আম চাষ হয়, যার মধ্যে আমরফল, হিমসাগর, লাঙড়া, বারি-৪, ফজলি সবচেয়ে রপ্তানিযোগ্য[1][2]। তবে আপাতত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রপ্তানির অবকাঠামো যেমন পরিমিত কুলিং, ভেপার হিট ট্রীটমেন্ট, দ্রুত পরিবহন ব্যবস্থা নেই[7][8]। উচ্চ মান নিশ্চিত করতে আধুনিক প্যাকেজিং, ফল সজ্জা ও গ্লোবাল জিএপি মত আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ অপরিহার্য[9]। দেশে বার্ষিক আমের বাজার মূল্য প্রায় ১৩,০০০–১৪,০০০ কোটি টাকা, যার একটি বড় অংশ দেশীয় চাহিদায় ব্যয় হয়[1]

 

বাংলাদেশের প্রধান আম রপ্তানি বাজার হিসেবে এখন পর্যন্ত ইউরোপ (বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, ইতালি) ও মধ্যপ্রাচ্য (সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার ইত্যাদি) উল্লেখযোগ্য হচ্ছে[6][10]। রফতানি বৃদ্ধি ও সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় বর্তমানে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার মতো নতুন বাজারের সম্ভাবনার কথাও আলোচনায় এসেছে[11][12]

উপযুক্ত রপ্তানি বাজার নির্বাচন: মূল মানদণ্ড

রপ্তানি বাজার নির্বাচন একটি গবেষণভিত্তিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। কয়েকটি মূল বিষয় বিবেচনা করতে হবে:

  • বাজারের চাহিদা ও ভোক্তা প্রোফাইল: লক্ষ্য দেশের স্থানীয় বাজারে আমের চাহিদা কেমন? সেখানকার জনসংখ্যা এবং তাদের খাদ্যাভ্যাস কেমন? উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যে অনেক বাংলাদেশি ও ভারতীয় প্রবাসী রয়েছেন, যারা নিজেদের ঐতিহ্য অনুযায়ী গ্রীষ্ম মৌসুমে আম চাহিদা রাখেন। এছাড়া স্থানীয় মধ্যপ্রাচ্যের তরুণ জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যকর ফল-শাকের দিকে ঝোঁক রাখায় আমের চাহিদা বাড়ছে[13][14]। তাই বাজারের ভোক্তা প্রোফাইল বিশ্লেষণ জরুরি: বাংলাদেশি উৎসর্গীকৃত আমজনিত বিশেষ স্বাদ ও পুষ্টি উপাদান স্থানীয় বা প্রবাসী ভোক্তার মধ্যে কতটা জনপ্রিয় হতে পারে তাও দেখতে হবে[13][14]

 

  • প্রতিযোগিতা ও বিকল্প উৎস: লক্ষ্য বাজারে অন্য কোন দেশগুলোর আম আমদানি ছয়? সেখানকার প্রধান সরবরাহকারী কোন দেশ, এবং আমাদের আমের সাথে উহার দাম ও গুণগত মান কেমন প্রতিযোগিতা করবে, বিবেচনা করতে হবে[15][16]। উদাহরণস্বরূপ, ইউএই ও সৌদি আরবের আম আমদানির প্রধান উৎস ভারত এবং পাকিস্তান, যাদের আম রফতানি অবকাঠামো অনেক উন্নত। বাংলাদেশি আমকে ওই মানদণ্ডে প্রতিযোগিতা করতে কতটুকু তৈরি, সেটা দেখা প্রয়োজন[8][7]

 

  • বোঝাপড়া ও আইনগত বাধা: আমদানিকানুন, সার্টিফিকেশন, শুল্ক ও বাধা (যেমন লিস্টেড কীটনাশক, রাসায়নিক নিষেধাজ্ঞা) চেক করতে হবে[17][18]। মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলোতে ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক এবং আমদানি আগে কঠোর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নিয়ম থাকে[18]। উদাহরণস্বরূপ, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আমদানি প্রক্রিয়ায় আমের নির্দিষ্ট মাপ, রঙ এবং পাকাকৃতি বজায় রাখার নিয়ম আছে[19]। ছাড়াও ওজনে কতটা ভর্তুকি পাওয়া যাবে বা কোন ধরনের সনদপত্র (যেমন Halal, Organics) প্রয়োজন হতে পারে, তা আলাদা করে খতিয়ে দেখতে হবে[19][20]

 

  • লজিস্টিকস ও পরিবহন খরচ: বাংলাদেশের আপেক্ষিক দূরত্ব এবং পরিবহন অবকাঠামো বিবেচনায় রাখতে হবে। আম একপ্রকার নশ্বর পণ্য, তাই দ্রুত পরিবহনের প্রয়োজন। বিমান পরিবহন দ্রুত কিন্তু ব্যয়বহুল[21]। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গিয়েছে আন্তর্জাতিক আকাশপথে কার্গো স্পেস সংকট এবং উচ্চ ফ্রেইট ভাড়া কারণে বাংলাদেশের আমের খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে[8][7]। চট্টগ্রাম বন্দরে লোড বা বিশেষ করে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত লজিস্টিক সুবিধার অভাব হলে সেগুলো মোকাবেলা করতে হবে। গাঢ় গ্রীষ্মকালে আম বিদেশে পাঠানো মানে সেটি দ্রুত বিক্রি না হলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে; তাই ধারাবাহিক সরবরাহ শৃঙ্খল নিশ্চিত করা জরুরি[21][7]

 

  • সংস্কৃতি ও খাদ্যাভাস: লক্ষ্য দেশের ভোক্তা কোন ধরনের আম পছন্দ করে—মিষ্টি, টক-মিষ্টি, চিকন নাকি পাকা অবস্থা—তা বুঝতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, দক্ষিণ ভারতীয় আম (অ্যালফনসো) মধ্যপ্রাচ্যে জনপ্রিয়[13]। বাংলাদেশের আমগুলো (যেমন আমরপালি, হিমসাগর) স্বাদে অনেক প্রবাসীর কাছে পরিচিত হলেও, নতুন ভোক্তাদের কাছে এগুলো তুলে ধরার প্রচার প্রয়োজন। মার্কেটিংয়ে প্রতিটি দেশের বিশেষ চাহিদা ও উৎসব (রমজান ইফতার-সেহরি) মাথায় রাখতে হবে।

 

উপসংহারে, বাজার নির্বাচন মানে “চাহিদা ও বিধি-বিধান ছাড়াও স্থানীয় প্রতিযোগিতা, পরিবহন-ব্যবস্থা, প্রফিট পোটেনশিয়াল ইত্যাদি বিবেচনা করা”[15]। যথাযথ গবেষণায় এসব সূচক বিশ্লেষণ করে বাজার বাছাই করতে হবে।

বাংলাদেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা ও পরিপ্রেক্ষিত
বাংলাদেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা ও পরিপ্রেক্ষিত

মধ্যপ্রাচ্যে সম্ভাব্য বাজার বিশ্লেষণ

মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের আমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্ভাবনাময় বাজার। প্রত্যেক দেশ নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল:

 

  • সৌদি আরব: সউদির আকাশপথে আম রফতানি অপেক্ষাকৃত সস্তা বলে ব্যবসায়ীরা দেখেছেন[14]। প্রতিবছর বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি বড় অংশ এখানে বসবাস করে, ফলে এদেশে বাংলাদেশি ও ভারতীয় আমের চাহিদা রয়েছে[14][16]। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালে সৌদিতে বাংলাদেশের থেকে ৩১০.৭৭ টন আম রপ্তানি হয়েছে[22], ২০২৪ সালেও ৩৫৬ টনের মত রপ্তানি হয়েছে[23]। তবে স্থানীয় বাজারে ভারত ও পাকিস্তানের আমও চালু থাকা সত্ত্বেও স্বাদ ও গুণে বাংলাদেশি আমের বিশেষ চাহিদা রয়েছে[24]। বাংলাদেশি আমের “স্বাদ উত্তম” হওয়ায় স্থানীয় এবং প্রবাসী উভয় গ্রাহক এটি পছন্দ করেন[24]। আম সরবরাহের জন্য সউদিতে বাংলাদেশি আমদের সংস্থায় বিশেষ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কন্টেইনার ও তীব্র সময়মতো মালবাহী ফ্লাইট ব্যবস্থা প্রয়োজন হবে।

 

  • সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE): UAE-তে যুক্তরাষ্ট্র পরবর্তী সর্ববৃহৎ ভারতীয় আমের বাজার[13]। প্রতিবছর প্রায় ১৫,৩৩৬ মেট্রিক টন আম আমদানি হয়, মূলত ভারতের বিভিন্ন প্রজাতির আম (অ্যালফনসো, কৌশল, দাশেহরি, টোটাপুরি ইত্যাদি)[13]। বাংলাদেশি আম বর্তমানে তুলনামূলক কম (দৈসির রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৩ সালে এখানে ১৪৮.৬৪ টন রপ্তানি হয়েছে[25]), তবে বাজারের আয়ের সামর্থ্য ও খাদ্যাভাস অনুযায়ী সুযোগ রয়েছে। আবুধাবি, দুবাইয়ের সুপারমার্কেটগুলোতে নানা ধরনের আম পাওয়া যায়, কিন্তু বাংলাদেশি আমের স্বাদ আর বৈচিত্র্য তুলে ধরলে নতুন নেশা তৈরি হতে পারে। UAE-র বাজারে ঢুকতে হলে দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা বিধি (ফাইজো সনদ), আরবি লেবেলিং নিয়ম মানতে হবে[19]। এছাড়া, নিয়মিত চাহিদা পূরণের জন্য অবকাঠামো যেমন কুলিং চেইন, ভ্রমণকারীদের প্রমোশন (ফেয়ার ও ফ্লাইয়ার) কাজ করতে হবে।

 

  • কুয়েত ও কাতার: সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এই দেশ দুটিতেও বাংলাদেশের আমের চাহিদা বাড়ছে। ২০২৩ সালে কুয়েতে ২৫১.৬৮ টন আম রপ্তানি হয়েছে[26], কাতারে কিছুটা কম (প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ১৬৩–১৭৭ টন)[23]। কুয়েতে বাংলাদেশি কমিউনিটি থাকার কারণে আমের বাজার রয়েছে, আর সুদ ও কাতারের স্থানীয় বাজারে বৈচিত্র্যময় ফলের প্রবেশের সুযোগ আছে। উল্লেখযোগ্য যে, কাতারে বাংলা দূতাবাস ও বেসরকারি উদ্যোগ নিয়ে সাম্প্রতিক ভুবনফল উদযাপন- ‘আল হাম্বা প্রদর্শনী’র আয়োজন করা হয়েছে (দেখা হবে পরবর্তী অংশে)। এই দেশগুলোর আমদানি নিয়ম জেনে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়/দূতাবাসের মাধ্যমে আমদানিকারক নির্ণয়ের উপায় বার করতে হবে।

 

  • ওমান, বাহরাইন: এ দুই দেশে আমদানি পরিমাণ তুলনামূলক কম। ২০২৩ সালে ওমানে বাংলাদেশি আম ২৭.৩৮ টন, বাহরাইনে ৩০.৩২ টন এসেছে[26]। এর পরিমাণ সাম্প্রতিক বছরেও দাঁড়ায় কয়েক দশ টনে। ওমানের বাজারে ভারত ও কুয়েতের আম বেশি, তাই বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিশেষ যোগাযোগ বা চুক্তি না করলে প্রবেশ কঠিন। তবে যারা ফ্রুট মার্কেট বা সুপারশপে সরবরাহ চান, তাদের স্থানীয় আমদানিকারক বা ডিসট্রিবিউটর খুঁজে নিতে হবে।

 

উল্লেখ্য, ইউকে, ইতালি এবং সৌদি আরবের মতো বৃহৎ বাজার ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে এখনো টার্গেট করা হচ্ছে। বিশেষ করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে, বাংলাদেশের আম আমদানি বন্ধনে থাকতে দেখা যাচ্ছে[13]। তবে ভারত ও থাইল্যান্ডের প্রতিযোগিতামূলক ভাড়াভাবে সরবরাহ থাকার কারণে আমাদের দাম কমিয়ে মানের স্বাদ ফুটিয়ে তুলতে হবে।

T&IB-এর জন্য বাজারে প্রবেশের ধাপে ধাপে নির্দেশিকা

ধরা যাক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট বাংলাদেশ (T&IB) একটি প্রতিষ্ঠান, যা মধ্যপ্রাচ্যে আম রফতানির পরিকল্পনা করছে। তারা বাজারে প্রবেশ করতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারে:

 

  1. প্রাথমিক প্রস্তুতি ও নিবন্ধন:
  2. প্রোডাক্ট রেজিস্ট্রেশন: প্রথমে T&IB-কে বাংলাদেশ কমার্স মন্ত্রণালয়/রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) এবং বাংলাদেশের রপ্তানি রেজিস্ট্রেশন এজেন্সিতে নিবন্ধন করতে হবে। বাংলাদেশে আম রপ্তানি করতে “রপ্তানি নিবন্ধন শংসাপত্র” (Export Registration Certificate) এবং “বীজজাত ও বাগানের পণ্য রপ্তানী শংসাপত্র” (যদি প্রযোজ্য) নেওয়া বাধ্যতামূলক[9]
  3. গ্লোবালজিএপি ও ফসল পরীক্ষা: খাদ্য নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান যেমন GLOBALG.A.P. অনুসরণ করা উত্তম[27]। আম উৎপাদনের সময় কীটনাশক ও জীবাণুনাশক ব্যবহারে স্বীকৃত রাসায়নিক অনুসরণ করে ফসল পালন করলে মধ্যপ্রাচ্য বাজারে প্রবেশ সহজ হবে।
  4. পেমেন্ট ও লাইসেন্স: প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংকে বিদেশী লেনদেনের জন্য প্রয়োজনীয় L/C নম্বর ও অন্য লাইসেন্স ব্যবস্থা করতে পারে। যদি কিছু দেশে (যেমন আরব দেশগুলোতে) অগ্রিম পেমেন্ট বাধ্য, তাতে প্রস্তুতি রাখা দরকার।

 

  1. গুণগত মান ও সার্টিফিকেশন:
  2. ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট: রফতানি করার পূর্বে আমের বৈশিষ্ট্য (রোগ, কীট মুক্ত) নিশ্চিত করতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় প্রশীতন ঘর বা পরীক্ষাগারে আমের নমুনা দিয়ে “ফাইটোস্যানিটারি সার্টিফিকেট” নিতে হবে[28]
  3. আন্তর্জাতিক গুণমান নিশ্চয়ন: আমের প্যাকেজিংয়ে EU, ISPM-১৫ (বিশ্ব উদ্ভিদ স্বাস্থ্য সংস্থা) ইত্যাদি স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করা উচিত। উদ্ভিদমূলক প্যাকেজে ডাইনেট ক্রেট বা শক্ত কাগজ বক্সে আলাদা ভেন্টিলেশন দেয়া উত্তম[29]
  4. শেফিং ও প্যাকিং প্ল্যান: আমের স্বচ্ছতা, আকৃতি, রং ও মিষ্টতা বজায় রেখে ছাড়ার জন্য বিশেষ যত্ন নেয়া হয়। প্রবাসী ভোক্তা বা স্থানীয় সুপারমার্কেটের রেফারেন্স অনুযায়ী প্যাকেজিং করানো যেতে পারে। যেমন, বিক্রয়ের সুবিধার্থে ৫-কেজি বা ১০-কেজি ট্রে প্যাক ইত্যাদি।

 

  1. বাজার অনুসন্ধান ও অংশীদার খোঁজা:
  2. বাজার পরিদর্শন: মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য দেশের সুপারমার্কেট, হোলসেল মার্কেট পরিদর্শন করে জানতে হবে কোন ধরনের আম বেশি বিক্রি হয়। একটি ব্যবসায়িক ভ্রমণে স্থানীয় আমদানিকারক, ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়ী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে।
  3. বাণিজ্য মিশন ও দূতাবাসের সহায়তা: তদারখাদার দূতাবাস বা বাণিজ্য মিশন (যেমন সৌদি বা UAE-তে বাংলাদেশ দূতাবাস) প্রায়ই স্থানীয় আমদানিকারক, বাজারের হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করে। T&IB প্রতিনিধি দূতাবাসের বাণিজ্য শাখায় যোগাযোগ করে বৈধ আমদানিকারকদের তালিকা বা বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারেন।
  4. বাণিজ্য মেলা ও প্রদর্শনী: আমের উৎস মেলায় অংশগ্রহণ করা খুবই কার্যকর। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৫ সালে দুবাইয়ের Fruit & Veg বা কাতারের সৌক ওয়াকিফ আম উত্সব (Al Hamba Exhibition) ইত্যাদিতে বাংলাদেশি আমের প্রদর্শনী হয়েছে। কাতারে গত জুনে সুক ওয়াকিফে Bangladeshi Mango Festival-এ বাংলাদেশের আমের বিভিন্ন প্রজাতি (অমরপালি, খিরসাপাত, ফজলি ইত্যাদি) প্রদর্শিত ও বিক্রি হয়েছে[30][31]। T&IB যদি এমন আন্তর্জাতিক (যেমন দুটি Fruit Logistica জার্মানি, Gulfood দুবাই) অথবা স্থানীয় আম-মেলা (যেমন কাতারের আল হাম্বা) সহিত অংশ নেন, তাতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচিতি হবে[32][33]
  5. স্থানীয় এজেন্ট/ডিস্ট্রিবিউটর নির্বাচন: প্রথম কয়েকটি চালানের জন্য T&IB নিজ উদ্যোগে পাঠানোর পরিবর্তে স্থানীয় অভিজ্ঞ এজেন্ট বা ডিস্ট্রিবিউটরের সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। এজেন্ট বাজার বুঝে এবং ডিসট্রিবিউশন চ্যানেল আছে এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা রেস্টুরেন্ট, হোটেল বা সুপারশপে পণ্য পৌঁছে দিতে পারে। এ ধরনের এজেন্ট খুঁজে পেতে বাণিজ্য মেলা, B2B প্ল্যাটফর্ম বা বাণিজ্য মিশনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়।

 

  1. মার্কেট এন্ট্রি স্ট্র্যাটেজি ও প্রচারণা:
  2. প্রতিযোগিতামূলক মূল্য নির্ধারণ: দেশিভাবে আমের উৎপাদন খরচ (মজুরি, প্যাকেজিং ইত্যাদি) বেশি হতে পারে। তাই উচ্চ মানের সনদপত্র দেখিয়ে কিছুটা প্রিমিয়াম রেট দাবি করা যেতে পারে। L/C বা অ্যাডভান্স ভিত্তিতে পেমেন্ট নিলে নিরাপদ হয়[34]
  3. পরীক্ষামূলক চালান: প্রথম পর্যায়ে কম পরিমাণে আম পাঠিয়ে বাজার যাচাই করা যায়। চুক্তির মধ্য দিয়ে প্রথম চালানে কিছু পরিবেশনের পরে ফলাফল দেখে পরবর্তী অর্ডার ঠিক করতে হবে।
  4. প্রচার ও বাজারজাতকরণ: মধ্যপ্রাচ্যের খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশের আমের স্বাদ, সুগন্ধি, পুষ্টিগুণ তুলে ধরার উপায় করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়া (লিঙ্কডইন বা ইন্সটাগ্রাম) এবং স্থানীয় খাদ্য ব্লগারদের মাধ্যমে আমের প্রোমোশন করা যেতে পারে। দেশে খাদ্য মন্ত্রণালয় বা প্রমোশন বোর্ডের সাহায়্য নিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন করা যেতে পারে।

 

এই ধাপে ধাপে প্রস্তুতি ও উদ্যোগের মাধ্যমে T&IB মার্কেটে প্রবেশের জন্য প্রস্তুত হবে। প্রয়োজনীয় পেমেন্ট গ্যারান্টি (যেমন ব্যাংকগ্যারান্টি বা ট্রেড ক্রেডিট ইনস্যুরেন্স) করে বিপরীতপক্ষের নিরাপত্তা দেয়া যেতে পারে।

consultant
Business Consultant

বিশ্বস্ত ক্রেতা খুঁজে বের করা ও যাচাই করার পদ্ধতি

একটি সফল রপ্তানি ব্যবসায়ের জন্য বিশ্বস্ত ক্রেতা পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্ত উপায়গুলো T&IB অনুসরণ করতে পারে:

  • আন্তর্জাতিক B2B প্ল্যাটফর্ম: Alibaba, TradeKey, ExportHub, বেসাল্ট ইত্যাদি বড় B2B সাইটে নিজের কোম্পানির তথ্য এবং আমের ছবি, সার্টিফিকেট আপলোড করে রাখুন[35]। এই সাইটগুলো Verified buyer বা Verified supplier সুবিধা দেয়। যেমন go4WorldBusiness বা ExportHub-এ সাইন আপ করে ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে নিজ পণ্য তালিকাভুক্ত করতে পারবেন[35]। এতে বিশ্বব্যাপী ক্রেতারা সরাসরি যোগাযোগ করতে পারে।

 

  • বাণিজ্য মেলা ও প্রদর্শনী: পূর্বে উল্লেখিত মেলা ও প্রদর্শনীগুলোতে অংশ নিয়ে সরাসরি ব্যবসায়ীদের সাথে দেখা করা যায়[32][33]। এমন জায়গায় হিম সেকশন বা লাইভ টেস্টিং বুথ থাকলে বিতরণের আগ্রহ বাড়ে। কোন মেলায় অংশ নিলে, সেখানে অংশ নেওয়া অন্যান্য দেশগুলোর সাপ্লায়ার বা আয়োজকদের সাথে পরিচয় গড়ে নতুন চ্যানেলও খুলতে পারে।

 

  • দূতাবাস ও বাণিজ্য মিশন সহায়তা: বাংলাদেশের বিভিন্ন দেশের দূতাবাসে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি কার্যালয় থাকে। এই অফিসগুলো প্রায়ই স্থানীয় শীর্ষ আমদানি সঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং আমদানিকারক সংস্থার তালিকা রাখতে পারে। T&IB এই অফিসগুলোতে যোগাযোগ করলে সঠিক আমদানিকারক বা আগ্রহী ব্যবসায়ী সম্পর্কে তথ্য পেতে পারে।

 

  • শিল্প সমিতি ও এক্সপোর্ট কাউন্সিল: বাংলাদেশে ফল ও সবজি রপ্তানিকারী সমিতি আছে, এবং বিশ্বব্যাপী আমদানিকারীদের সংগঠন রয়েছে। এধরনের ইন্ডাস্ট্রি গোষ্ঠীর মিটিং-এ অংশ নেওয়া বা সদস্যতা করে নেটওয়ার্ক গড়তে পারেন। যেমন বাংলাদেশ ফল ও সবজি রপ্তানিকারী সমিতির সাথে যোগাযোগ করে সুপারিশ চাওয়া যেতে পারে।

 

  • অনলাইন অনুসন্ধান ও সোশ্যাল মিডিয়া: গুগলে বা লিঙ্কডইন-এ “fresh mango buyers in UAE” ইত্যাদি খুঁজে দেখুন। অনলাইন পোর্টাল যেমন ট্রেড শো, ফার্মার্স মার্কেট বা আমদানিকারকদের কো-অপের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রোফাইল দেখে সম্ভাব্য ক্রেতাদের খুঁজে পাওয়া যায়[35][36]। লিঙ্কডইন ব্যবহার করে কোম্পানি বা আমদানিকারক খুঁজে সরাসরি যোগাযোগ করা যেতে পারে।

 

  • অনুপ্রবেশ ও যাচাইকরণ: পাওয়া যেকোন ক্রেতার আইডেন্টিটি যাচাই করুন। তাদের ব্যবসায়িক লাইসেন্স, কোম্পানির নিবন্ধন নম্বর, ব্যবসার ঠিকানা ও ফোন চেক করুন। স্থানীয় ব্যবসায়িক রেফারেন্স বা ব্যাংক রেফারেন্স নিতে পারেন। তথ্য যাচাই করতে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রিপোর্টিং এজেন্সি ব্যবহার করে দেখতে পারেন তাদের আর্থিক অবস্থা কেমন[37][38]

 

  • নিরাপদ পেমেন্ট ব্যবস্থাপনা: প্রথম অর্ডারের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন। লেটার অফ ক্রেডিট (L/C) সেট করার মাধ্যমে পেমেন্ট নিশ্চিত করতে পারেন। L/C হওয়ার পর সনদপত্র সঠিক পেলে বিপরীত প্রান্তি ব্যাংক পেমেন্ট রিলিজ করে। প্রয়োজনে এপ্লেক্স বা এসক্রো এর মতো নিরাপদ সার্ভিস ব্যবহার করা যেতে পারে[34]

 

  • প্রশংসাপত্র ও নেটওয়ার্ক: অন্য রপ্তানিকর্তাদের কাছে জানতে পারেন, তারা কোন ক্রেতাদের সাথে কাজ করেছেন এবং কাজের অভিজ্ঞতা কেমন। ইতিমধ্যে বাজারে পরিচিত কোনো নাম বা বড় সুপারমার্কেট চেইন নিজ ব্র্যান্ড অর্ডার করতে পারে কিনা দেখুন। টার্গেট মার্কেটে বাণিজ্য মেলা বা ব্যবসায়ী সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে টেবিল মিটিংয়ের সুবিধা ব্যবহার করুন।

 

এই সব ধরণের পদ্ধতিতে T&IB বিশ্বস্ত ক্রেতা খুঁজে পেতে সক্ষম হবে। তবে মনে রাখতে হবে সঙ্গত পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া ঠিকাদারি মেনে নেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে[37][34]

দরকষাকষি, সম্পর্ক গঠন ও নিরাপদ পেমেন্টের টিপস

ব্যবসায়ী সম্পর্ক গড়ে তোলার মূলমন্ত্র হলো বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সুবিধা। বাংলা অভিবাসীদের বাজারে ব্যবহৃত টিপসগুলো নিচে দেওয়া হল:

 

  • দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে তোলা: একবার সুনাম পাওয়া গেলে পরবর্তী অর্ডার সহজ হয়[39]। ক্রেতাদের সাথে নিয়মিত কথা বলে তাদের প্রয়োজনীয়তা বুঝুন এবং পরবর্তীতে নির্ভরযোগ্য সরবরাহ দেবেন তা নিশ্চিত করুন। নিয়মিত যোগাযোগ ও সহায়তা দীর্ঘমেয়াদী লেনদেনে সহায়ক হয়।

 

  • নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি: এল/C (Letter of Credit) সবচেয়ে নিরাপদ পদ্ধতি। এতে আমদানিকারকের ব্যাংক নিশ্চিত রাখে যে পণ্য সঠিক শর্ত অনুযায়ী পাঠালে পেমেন্ট হবে। অন্য বিকল্প হল ডকুমেন্টারি কোলেকশন অথবা ব্যাংক গ্যারান্টি। অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড বা ইলেকট্রনিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম (যেমন PayPal, Alipay) কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার্য, তবে রুপি বা ডলার লেনদেন নিশ্চিত করে নিন। অগ্রিম পেমেন্ট চাওয়া হলে যথাযথ ব্যাংক নথিপত্র থেকে পেমেন্ট পেতে হবে[34]

 

  • আলোচনার কৌশল: দাম নির্ধারণের সময় বাজারের চাহিদা ও প্রতিযোগিতার কথা মাথায় রাখুন। যদি প্রথম চালানের জন্য বিশেষ ছাড় দিতে চান, তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ রাখুন। আদানপ্রদান সম্পন্ন হওয়ার পর অপর পক্ষ যাতে বিলম্ব না করে, তা নিশ্চিত করতে প্রাথমিক টাকা বা ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া যেতে পারে। ব্যবসায়িক সভা বা অনলাইন মিটিং-এ পণ্য প্রদর্শন ও স্বাদ গ্রহণ করানোর ব্যবস্থা করলে বিশ্বাস বাড়ে।

 

  • মান বজায় রাখা: বরাদ্দকৃত মানের আম বিদেশ পাঠান; সাব-স্ট্যান্ডার্ড পণ্য ভুলবেন না। একবার কোনো ক্রেতার কাছে মানহীন পণ্য গেলে ভবিষ্যত সম্পর্ক ধ্বংস হতে পারে[39]। প্রথম অর্ডার যথাসম্ভব গুণমানের রাখতে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।

 

  • নিয়মিত আপডেট ও পরিষেবা: চালান সম্পর্কে ক্রেতাকে নিয়মিত ইনফরম করুন (প্যাকিং লিস্ট, বিল অফ লেডিং, ল্যাব রিপোর্ট ইত্যাদি)। পণ্যের আসার পরেও পরবর্তী মৌসুমের অর্ডার নিয়ে আলোচনা করুন, মার্কেটে নতুন চাহিদার খবর নিন। এই ধরণের খেয়াল রাখলে সম্পর্ক শক্তিশালী হয়[39]

পচনশীল পণ্য (আম) রপ্তানির চ্যালেঞ্জ ও সমাধান

আম একটি অত্যন্ত নরম ও সংবেদনশীল পণ্য হওয়ায় রপ্তানিতে বিশেষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  • সীমিত ভ্যালিডিটি: পাকা আম দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই কাটা-ফুটো-ছেঁড়াচেরা ছিল না ভোরের মধ্যে ডেলিভারি দিতে হবে। সমাধান হিসেবে প্রাক-শিপমেন্ট ভ্যাকুয়াম বা শীতকক্ষজাতীয় পরিবহন ব্যবহার করতে পারে T&IB। দ্রুত কুলিং চেইন (চিল্ড চেইন) নিশ্চিত করতে হিমাগার বা কন্টেইনার ব্যবহার করতে হবে। দ্রুতত্বের জন্য বিমান পরিবহন পছন্দ করা যেতে পারে, যদিও খরচ বেশি[21]। সমুদ্রপথে পাঠালে খুব সতর্কতা অবলম্বন করে কম তাপমাত্রায় এবং প্যাকেজিং ঘনিষ্ঠ না করে পাঠাতে হবে[21]

 

  • উচ্চ পরিবহন খরচ: জ্বালানির দাম ও কার্গো স্পেস সংকটে বাংলাদেশি আম আমদানির খরচ বেড়ে গেছে[8][7]। বিমানবন্দরে সঠিক ফ্রেইট এজেন্ট বা অগ্রিম বুকিং করলে খরচ কিছুটা কমানো যায়। প্রয়োজনে কাস্টমসের সঙ্গে আলাপ করে আম প্যাকিং বা টেম্পারেচার নিয়ন্ত্রণ খরচের অগ্রিম ছাড় চেয়ে দেখা যেতে পারে।

 

  • বাস্তব সময়ের ট্রাজেডি: সম্প্রতি বাংলাদেশ বিমানের কার্গো ফ্রেইট পুল প্রিভিলেজ কৃষিজাত পণ্যের জন্য নেই, ফলে পোশাক যাতায়াতের চাপে আমের স্থান কম পাচ্ছে[8]। এই সমস্যা মোকাবিলায় বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে বিশেষ সমঝোতা করে শীষ মরসুমে আমচাপ বরাদ্দ দেওয়ার প্রস্তাব করতে হবে।

 

  • প্যাকেজিং ও মান নিয়ন্ত্রণ: খর্বমানের বা অসম সময়ে তোলা আম থেকে পচন হতে পারে। তাই ফসল সংগ্রহের পর দ্রুত ছাঁকনি, বাছাই ও প্যাকেজিং করে জমিতে অতিরিক্ত পাকা পড়ে যাওয়া লটারির আম রপ্তানি করবেন না। প্রমাণীকৃত নিরীক্ষাগারে বেলেন্স দিয়ে আর্দ্রতা ও রঙ পরীক্ষার মতো গুণগত পরিদর্শন করান।

 

  • বাজার ঝুঁকি ও বৈদেশিক মুদ্রার ওঠাপড়া: মধ্যপ্রাচ্যে দেশের নিজস্ব মুদ্রায় স্ট্রং হলেও, রপ্তানিতে ডলার মূল্য ওঠা-নামা টাকার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তাই পেমেন্ট শর্ত দিতে সময়ে ব্যাংক লক-ইন বা ফরোয়ার্ড করেন্সি চুক্তি নিয়ে ঘাটতি কমাতে হবে।

 

উপরোক্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় T&IB চাহিদামতো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত পরিবহন, পাকা আমের মান নিশ্চিতকরণ, এবং দীর্ঘমেয়াদী লজিস্টিক পরিকল্পনা অবলম্বন করবে। এ ছাড়া, প্রতি চালানে আম উৎপাদকের নাম ও লট নম্বর দিয়ে মান ট্রেসযোগ্য রাখলে গ্রাহক আস্থা বাড়ে।

Brazil
BBCCI

পরিশেষে: T&IB-এর কার্যকর কর্মপরিকল্পনা

উপরের তথ্য-ভিত্তিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, T&IB নিম্নলিখিত সুপারিশমূলক কর্মপরিকল্পনা নিতে পারে:

 

  1. ব্যবসায়িক লক্ষ্য নির্ধারণ: প্রথমে কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিক, এ বছর কত টন আম রপ্তানি করতে চায় (উদাহরণস্বরূপ, ৫০০–১০০০ মেট্রিক টন) এবং কোন দেশকে প্রধান লক্ষ্য হিসেবে বেছে নেবে (উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরব)।

 

  1. প্রয়োজনীয় নিবন্ধন সম্পন্ন: EPB নিবন্ধন, রপ্তানি রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, উদ্ভিদজাত পণ্য রপ্তানী লাইসেন্স সংগ্রহ এবং স্ট্যান্ডার্ড সার্টিফিকেশন (যেমন GLOBALG.A.P., HACCP) নিশ্চিত করা।

 

  1. গুণগত মান উন্নয়ন: বাছাই, প্যাকিং এবং ভ্যাকুয়াম-শিপিং প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে কৃষি প্রকৌশল কেন্দ্রের সাথে সমন্বয় করা। প্রয়োজনে বাকি কিছু প্ল্যান্টে ভাপ তাপকরণ (VHT) সুবিধা স্থাপন বা ভাড়া নেয়া।

 

  1. প্রথম চালান রপ্তানি: লক্ষ্য দেশের আমদানিকারক বা ডিসট্রিবিউটরের সাথে চুক্তি সেরে ছোট চালান (টেস্ট চালান) পাঠানো। চালানগুলো সঠিক ডকুমেন্ট (ফাটোস্যানিটারি সার্টিফিকেটসহ) নিয়ে যাচ্ছে তা নিশ্চিত করা।

 

  1. বাজার প্রতিক্রিয়া মূল্যায়ন: প্রথম চালানের পর উক্ত দেশে আমের মান ও বিক্রয় পর্যবেক্ষণ করা। যদি মার্কেটে ভাল সাড়া পাওয়া যায় এবং ক্রেতারা সন্তুষ্ট থাকে, পরবর্তী অর্ডারের পরিমাণ বাড়ানো যাবে।
  2. সম্পর্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ: সফল চালানের ভিত্তিতে ক্রেতার সঙ্গে বিশ্বাসযোগ্য যোগাযোগ বজায় রেখে বড় অর্ডার চুক্তি করা। মধ্যপ্রাচ্য বাজারের চাহিদা অনুযায়ী সিজনাল ক্যালেন্ডার তৈরি করে স্টক প্রস্তুত রাখা।

 

  1. পেমেন্ট গ্যারান্টি: পরবর্তী অর্ডারের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে ফিন্যান্স চূড়ান্ত করে নেয়া। প্রয়োজন হলে কর্পোরেট গ্যারান্টি বা ইন্স্যুরেন্স দিয়ে ঝুঁকি কমানো।

 

উক্ত পরিকল্পনার প্রতিটি ধাপেই উল্লিখিত উৎসসমূহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ও অর্থায়ন (সরকারি বা বহুজাতিক সংস্থা থেকে) গ্রহণ করে দক্ষতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে[40]

 

সবশেষে, মনে রাখতে হবে ব্যবসায়িক ধৈর্য ও গুণগত বেষ্টনী বজায় রাখা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদে সফলতার চাবিকাঠি[39]। প্রতিটি চালানে মান নিশ্চিত করলে ক্রেতার আস্থা অর্জিত হবে, যা পরবর্তী সহযোগিতা বাড়াবে। T&IB যদি এই পদ্ধতিগত ও বিশদ পরিকল্পনা অনুসরণ করে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি আমের জন্য একটি স্থায়ী বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

 

সূত্র: বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ওয়েবসাইট, বাণিজ্য সংবাদ ও বাজার বিশ্লেষণ (সদ্য প্রকাশিত সংবাদপত্র, বাণিজ্য পোর্টাল ও খামার বিজ্ঞান সংক্রান্ত ব্লগ) প্রভৃতির তথ্যাদি থেকে উপস্থাপিত।

[1] [7] [11] [23] Bangladesh mango exports rise 66% in 2025

https://www.freshplaza.com/europe/article/9768379/bangladesh-mango-exports-rise-66-in-2025/

[2] [3] [5] [9] [27] [28] Bangladesh to export 4,000 tonnes mangos: Official | Business

https://www.bssnews.net/business/283334

[4] [6] Bangladesh is a potential mango exporter

https://www.observerbd.com/news/421029

[8] Mango exports face challenges in Bangladesh

https://www.freshplaza.com/asia/article/9642823/mango-exports-face-challenges-in-bangladesh/

[10] [12] [14] [24] Bangladesh Mango Exports 2025 | Mango exports rebound as quality, production improve | Bangladeshi Mango Export Growth | The Daily Star

https://www.thedailystar.net/business/news/mango-exports-rebound-quality-production-improve-3993161

[13] Why is UAE becoming one of the biggest markets for Indian mangoes? | World News – Times of India

https://timesofindia.indiatimes.com/world/middle-east/why-is-uae-becoming-one-of-the-biggest-markets-for-indian-mangoes/articleshow/122204512.cms

[15] [17] How to Identify Potential Export Markets?

https://usetorg.com/blog/how-to-identify-potential-export-markets

[16] [22] [25] [26] Mango exports fail to keep pace with rising production

https://www.daily-sun.com/post/812652

[18] [19] [20] [21] Essential Guide to Importing Fresh Fruit into the Middle East

https://freshpoint.co.th/importing-fresh-thai-fruits-middle-east/

[29] [32] [35] [36]  Mango Buyers & Importers in Bangladesh | go4WorldBusiness.com

https://www.go4worldbusiness.com/buyers/bangladesh/mango.html

[30] [31] [33]  First Bangladeshi Mango Festival opens at Souq Waqif – Gulf Times

https://www.gulf-times.com/article/706558/qatar/first-bangladeshi-mango-festival-opens-at-souq-waqif

[34] [37] [38] [39] [40] Bizongo

https://www.bizongo.com/blog/finding-the-right-buyers-for-export-prevent-fraud